ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

বিএনপি নেতাদের পুরনো সব মামলা সক্রিয় হচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক ::

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসার কোনো আগ্রহ নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। বরং আগামী এক বছর বিএনপি যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে না পারে সেদিকেই মনোযোগ বাড়াবে দলটি।
বিএনপি নেতাদের নামে থাকা হত্যা-সন্ত্রাস, গাড়ি পোড়ানো ও নাশকতার পুরনো মামলাগুলো সক্রিয় করা হচ্ছে। একই সঙ্গে নির্বাচনী সফরের নামে ফেনীর হামলার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে তীক্ষ নজর রাখবে সরকার। আওয়ামী লীগ ও সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এই লক্ষ্য ও পরিকল্পনার কথা জানা গেছে। সূত্রগুলো বলছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপিকে নানাভাবে চাপে রাখার যে মনোভাব ছিল সরকারি দলের, তা এখনো আছে। ৭ নভেম্বর বিএনপি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় ধরনের শোডাউন করতে চায়। কিন্তু ওই দিন ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগ পৃথক কর্মসূচি দিতে পারে বলেও জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের দুজন নেতা বলেছেন, ৭ নভেম্বর কীসের বিপ্লব, কীসের সংহতি দিবস? বিপ্লব হয় একটি আদর্শকে ধারণ করে। জিয়াউর রহমানের আদর্শ কী ছিল? তার আদর্শ ছিল অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা দখল করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করা। তারা বলেন, এদিন কোনো ধরনের নৈরাজ্যের চেষ্টা করা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা প্রতিহত করবে। পাশাপাশি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীও সতর্ক অবস্থানে থাকবেন। সূত্রমতে, নির্বাচনের এখনো এক বছর বাকি। এরই মধ্যে বিএনপিকে রাজপথমুখী হতে দিলে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলছেন, তিন মাস বিদেশে থেকে ফিরে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে কক্সবাজার গেলেন। বিমানপথে না গিয়ে সড়কপথে গিয়ে ‘পরিকল্পিতভাবে’ ফেনীতে সাংবাদিকদের গাড়িবহরে হামলা করলেন। এ পরিস্থিতি যেন পুনরায় না ঘটে সেজন্য নজরদারি করা হবে বিএনপির সমাবেশ ও কর্মসূচি ঘিরে। সে কারণে ৭ নভেম্বর বিএনপিকে রাজধানীতে সমাবেশ করার সুযোগ না-ও দেওয়া হতে পারে। নেতারা জানান, বিএনপি আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যেতে চায়। এজন্য তারা সরকারকে সংলাপে অংশ নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করবে। কিন্তু সরকার কোনোভাবেই বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসবে না। বরং বিএনপি নেতাদের নামে থাকা পুরনো মামলাগুলো সচল করে গ্রেফতার জালে আটকিয়ে সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদকে লালন-পালনকারী দল হচ্ছে বিএনপি। নির্বাচন সামনে রেখে তারা যদি কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় তাহলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর সন্ত্রাস- জঙ্গিবাদ ছেড়ে গণতান্ত্রিক পথে নির্বাচনে অংশ নিলে রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের স্বাগত জানানো হবে। এরই মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলাগুলো সক্রিয় করা হয়েছে। আন্দোলন দমনের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার মামলাগুলো সক্রিয় ও দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সরকারের অন্যতম কৌশল হচ্ছে খালেদাকে মামলায় ব্যস্ত রাখা। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের আইনজীবী মহল সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অবহিত করেছে যে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা-তারেকের সাজা হবে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়া ও তারেককে মামলার চাপে রাখা গেলে বিএনপির নড়াচড়া করার সুযোগ থাকবে না। কারণ, বিএনপি নেতারাও বুঝে গেছেন মামলায় মা-ছেলে দুজনই দোষী সাব্যস্ত হবেন। তাই এ বছর খালেদা-তারেকের মামলা নিয়েই ব্যস্ত থাকবে বিএনপি। ফলে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারবে না দলটি। বাধ্য হয়েই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে। গতকাল চট্টগ্রামে এক স্মরণসভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি আগামী নির্বাচনে আসবে, তা আমরা জানি। যে কোনো পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে। নির্বাচনে না এলে তাদের পরিণতি মুসলিম লীগের মতো সংকুচিত হবে। ’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বিএনপিকে কোনো ধরনের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করার সুযোগ দেওয়া হবে না। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেওয়ার নামে বিএনপি ফেনীতে শুধু সাংবাদিকদের গাড়িতে হামলা করেছে সংবাদের শিরোনাম হওয়ার জন্য। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড করলে উচিত জবাব দেওয়া হবে। ’ বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাঠকের মতামত: